আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।
বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।
তোমার বুকে বাজল ধ্বনি
বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে--
ফাল্গুনে শ্রাবণে, কত প্রভাতে রাতে॥
যে কথা রয় প্রাণের ভিতর অগোচরে
গানে গানে নিয়েছিলে চুরি করে।
সময় যে তার হল গত
নিশিশেষের তারার মতো--
শেষ করে দাও শিউলিফুলের মরণ-সাথে॥
.
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার
31 December, 2015
Amar Rat Pohalo Sharod Prate - আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।
26 December, 2015
সখা, আপন মন নিয়ে কাঁদিয়ে মরি
সখা, আপন মন নিয়ে কাঁদিয়ে মরি
পরের মন নিয়ে কী হবে।
আপন মন যদি বুঝিতে নারি,
পরের মন বুঝে কে কবে।
অবোধ মন লয়ে ফিরি ভবে,
বাসনা ফাঁদে প্রাণে হা হা রবে,
এ মন দিতে চাও দিয়ে ফেলো
কেন গো নিতে চাও মন তবে।
স্বপন সম সব জানিয়ো মনে,
তোমার কেহ নাই এ ত্রিভুবনে;
যে জন ফিরিতেছে আপন আশে,
তুমি ফিরিছ কেন তাহার পাশে।
নয়ন মেলি শুধু দেখে যাও,
হৃদয় দিয়ে শুধু শান্তি পাও।
তোমারে মুখ তুলে চাহে না যে,
থাক্ সে আপনার গরবে।
.
রাগ: ভৈরবী
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
23 December, 2015
Ami tomaro Songe Bedhechi Amaro Praan - আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
সুরের বাঁধনে--
তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি
অজানা সাধনে॥
সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,
সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ--
তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম
রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে॥
তোমার অরূপ মূর্তিখানি
ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।
বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে,
সুদূর দিগন্তে
সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী
গানের তানের সে উন্মাদনে॥
.
রাগ: বাহার-সোহিনী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
jhara Pata Go Ami Tomari Dale - ঝরা পাতা গো আমি তোমারি দলে
ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে।
অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলে
ফাগুন দিল বিদায়মন্ত্র আমার হিয়াতলে॥
ঝরা পাতা গো, বসন্তী রঙ দিয়ে
শেষের বেশে সেজেছ তুমি কি এ।
খেলিলে হোলি ধূলায় ঘাসে ঘাসে
বসন্তের এই চরম ইতিহাসে।
তোমারি মতো আমারো উত্তরী
আগুন-রঙে দিয়ো রঙিন করি--
অস্তরবি লাগাক পরশমণি
প্রাণের মম শেষের সম্বলে॥
.
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ ফাল্গুন, ১৩৩৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৪ মার্চ, ১৯৩১
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
21 December, 2015
Tomar Khola Hawa - তোমার খোলা হাওয়া
তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে
টুকরো ক'রে কাছি
ডুবতে রাজি আছি
আমি ডুবতে রাজি আছি।
সকাল আমার গেল মিছে,
বিকেল যে যায় তারি পিছে গো ---
রেখো না আর, বেঁধো না আর
কূলের কাছাকাছি।
মাঝির লাগি আছি জাগি
সকল রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে
করে কেবল খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে,
ডরব না তার ভ্রূকুটিতে;
দাও ছেড়ে দাও ওগো, আমি
তুফান পেলে বাঁচি।
.
রাগ: সারিগান
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুধীরচন্দ্র কর
20 December, 2015
Bhalobashi Bhalobashi - ভালোবাসি, ভালোবাসি
ভালোবাসি, ভালোবাসি--
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে
বাজায় বাঁশি॥
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি
আঁখির জলে যায় ভাসি॥
সেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে।
সেই সুরে বাজে মনে অকারণে
ভুলে-যাওয়া গানের বাণী,
ভোলা দিনের কাঁদন-হাসি॥
.
রাগ: খাম্বাজ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1331
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1924
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
19 December, 2015
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই,
চিরদিন কেন পাই না?
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে,
তোমারে দেখিতে দেয় না?।
ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে
হারাই-হারাই সদা হয় ভয়,
হারাইয়া ফেলি চকিতে ॥
কী করিলে বলো পাইব তোমারে,
রাখিব আঁখিতে আঁখিতে।
এত প্রেম আমি কোথা পাব নাথ,
তোমারে হৃদয়ে রাখিতে?
আর কারো পানে চাহিব না আর,
করিব হে আমি প্রাণপণ--
তুমি যদি বল এখনি করিব বিষয়বাসনা
বিসর্জন ॥
.
রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৯ মাঘ, ১২৯১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন
Ami Rupe Tomay Bholabo Na - আমি রূপে তোমায় ভোলাব না
আমি রূপে তোমায় ভোলাব না,
ভালোবাসায় ভোলাব।
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো,
গান দিয়ে দ্বার খোলাব॥
ভরাব না ভূষণভারে,
সাজাব না ফুলের হারে–
প্রেমকে আমার মালা করে গলায়
তোমার দোলাব॥
জানবে না কেউ কোন্ তুফানে তরঙ্গদল
নাচবে প্রাণে,
চাঁদের মতো অলখ টানে
জোয়ারে ঢেউ তোলাব॥
.
রাগ: কীর্তন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
18 December, 2015
আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই
আমার পরান যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর, কেহ নাই কিছু নাই গো।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও, সুখের সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,
আর কিছু নাহি চাই গো।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,
দীর্ঘ বরষ মাস।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে, তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো।
.
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে
খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে,
বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে,
কী ছিল বিধাতার মনে।
বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই,
বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়,
খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’
বনের পাখি বলে, ‘না, আমি শিকলে ধরা
নাহি দিব।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়, আমি কেমনে
বনে বাহিরিব।’
বনের পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি
বনের গান ছিল যত,
খাঁচার পাখি গাহে শিখানো বুলি তার—
দোঁহার ভাষা দুইমত।
বনের পাখি বলে ‘খাঁচার পাখি ভাই, বনের
গান গাও দেখি।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি ভাই,
খাঁচার গান লহো শিখি।’
বনের পাখি বলে, ‘না, আমি শিখানো গান
নাহি চাই।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায় আমি কেমনে
বনগান গাই।’
বনের পাখি বলে, ‘আকাশ ঘন নীল কোথাও
বাধা নাহি তার।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘খাঁচাটি পরিপাটি
কেমন ঢাকা চারিধার।’
বনের পাখি বলে, ‘আপনা ছাড়ি দাও
মেঘের মাঝে একেবারে।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘নিরালা কোণে বসে
বাঁধিয়া রাখো আপনারে।’
বনের পাখি বলে, ‘না, সেথা কোথায়
উড়িবারে পাই !’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়, মেঘে কোথায়
বসিবার ঠাঁই।’
এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে,
তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,
নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,
বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা—
কাতরে কহে, ‘কাছে আয় !’
বনের পাখি বলে, ‘না, কবে খাঁচায় রুধি
দিবে দ্বার !’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়, মোর শকতি নাহি
উড়িবার।’
.
রাগ: কীর্তন
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৯ আষাঢ়, ১২৯৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1892
রচনাস্থান: শাহজাদপুর
স্বরলিপিকার: সরলা দেবী
আমি রূপে তোমায় ভোলাব না
আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব।
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাব॥
ভরাব না ভূষণভারে,
সাজাব না ফুলের হারে--
প্রেমকে আমার মালা করে গলায়
তোমার দোলাব॥
জানবে না কেউ কোন্ তুফানে তরঙ্গদল
নাচবে প্রাণে,
চাঁদের মতো অলখ টানে জোয়ারে
ঢেউ তোলাব॥
.
রাগ: কীর্তন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
জীবনে আজ কি প্রথম এল বসন্ত
জীবনে আজ কি প্রথম এল বসন্ত।
নবীনবাসনাভরে হৃদয় কেমন করে,
নবীন জীবনে হল জীবন্ত।
সুখভরা এ ধরায় মন বাহিরিতে চায়,
কাহারে বসাতে চায় হৃদয়ে।
তাহারে খুঁজিব দিকদিগন্ত॥
যেমন দখিনে বায়ু ছুটেছে,
না জানি কোথায় ফুল ফুটেছে,
তেমনি আমিও, সখী যাব--
না জানি কোথায় দেখা পাব।
কার সুধাস্বর-মাঝে, জগতের গীত বাজে,
প্রভাত জাগিছে কার নয়নে,
কাহার প্রাণের প্রেম অনন্ত
তাহারে খুঁজিব দিকদিগন্ত॥
.
রাগ: কানাড়া
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই
মানা মনে মনে!
মেলে দিলেম গানের সুরের এই
ডানা মনে মনে।
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ্-কথার–
পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা
মনে মনে।।
সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি মেঘে মেঘে
আকাশ-কুসুম তুলি।
সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে
আমি যাই ভেসে দূর দিশে–
পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার দিই হানা
মনে মনে।।
.
রাগ: কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার
16 December, 2015
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,
দীর্ঘ বরষ মাস।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে, তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো।
15 December, 2015
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।
খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত ॥
কারা এই সমুখ দিয়ে আসে যায় খবর নিয়ে,
খুশি রই আপন মনে-- বাতাস বহে সুমন্দ ॥
সারাদিন আঁখি মেলে দুয়ারে রব একা,
শুভখন হঠাৎ এলে তখনি পাব দেখা।
ততখন ক্ষণে ক্ষণে হাসি গাই আপন-মনে,
ততখন রহি রহি ভেসে আসে সুগন্ধ ॥
.
রাগ: খাম্বাজ-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ চৈত্র, ১৩১৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1912
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায়
সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে,
তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে
আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম,
কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে
আমার দুঃখসুখের গানে
সুর দিয়েছ তুমি,
আমি তোমার গান তো গাই নি॥
.
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে-- তুমি জান না,
আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥
সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,
সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ--
তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম
রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে॥
তোমার অরূপ মূর্তিখানি
ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।
বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে
সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী
গানের তানের সে উন্মাদনে॥
.
রাগ: বাহার-সোহিনী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার
13 December, 2015
আমি আশায় আশায় থাকি
আমি আশায় আশায় থাকি।
আমার তৃষিত-আকুল আঁখি॥
ঘুমে-জাগরণে-মেশা প্রাণে স্বপনের নেশা--
দূর দিগন্তে চেয়ে কাহারে ডাকি॥
বনে বনে করে কানাকানি অশ্রুত বাণী,
কী গাহে পাখি।
কী কব না পাই ভাষা,
মোর জীবন রঙিন কুয়াশা
ফেলেছে ঢাকি।
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে ॥
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে ॥
আমার এ তার বাঁধা কাছের সুরে,
ওই বাঁশি যে বাজে দূরে।
গানের লীলার সেই কিনারে যোগ দিতে কি সবাই পারে
বিশ্বহৃদয়পারাবারে রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে--
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে?।
.
রাগ: খাম্বাজ
তাল: দাদরা-খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1326
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
নৈবদ্য - তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি
তোমারে দিই নি সুখ, মুক্তির নৈবেদ্য গেনু রাখি
রজনীর শুভ্র অবসানে; কিছু আর নাহি বাকি,
নাইকো প্রার্থনা, নাই প্রতি মুহূর্তের দৈন্যরাশি,
নাই অভিমান, নাই দীনকান্না, নাই গর্বহাসি,
নাই পিছে ফিরে দেখা। শুধু সে মুক্তির ডালিখানি
ভরিয়া দিলাম আজি আমার মহৎ মৃত্যু আনি।
ওঠো হে ওঠো রবি, আমারে তুলে লও
ওঠো হে ওঠো রবি, আমারে তুলে লও,
অরুণতরী তব পুরবে ছেড়ে দাও,
আকাশ-পারাবার বুঝি হে পার হবে--
আমারে লও তবে, আমারে লও তবে।
12 December, 2015
হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে জাগো
হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নরদেবতারে--
উদার ছন্দে, পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।
ধ্যানগম্ভীর এই-যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর,
হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে--
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ॥
.
কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন--
শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।
পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার,
দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে--
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ॥
.
এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান।
এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।
এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।
মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা
সবার-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে--
আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে ॥
.
রাগ: শঙ্করা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৮ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: ভীমরাও শাস্ত্রী
তুমি কাহার সন্ধানে সকল সুখে আগুন জ্বেলে বেড়াও
তুমি কাহার সন্ধানে
সকল সুখে আগুন জ্বেলে বেড়াও কে জানে।
এমন ব্যাকুল করে
কে তোমারে কাঁদায় যারে ভালোবাস।
তোমার ভাবনা কিছু নাই--
কে যে তোমার সাথের সাথি
ভাবি মনে তাই।
তুমি মরণ ভুলে
কোন্ অনন্ত প্রাণসাগরে আনন্দে ভাস॥
হায় রে, ওরে যায় না কি জানা
হায় রে, ওরে যায় না কি জানা ।
নয়ন ওরে খুঁজে বেড়ায়, পায় না ঠিকানা ॥
অলখ পথেই যাওয়া আসা, শুনি
চরণধ্বনির ভাষা–
গন্ধে শুধু হাওয়ায় হাওয়ায় রইল
নিশানা ॥
কেমন করে জানাই তারে
বসে আছি পথের ধারে ।
প্রাণে এল সন্ধ্যাবেলা আলোয় ছায়ায়
রঙিন খেলা–
ঝরে-পড়া বকুলদলে বিছায় বিছানা ॥
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস,
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে--
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী
দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ,
কী মায়া গো--
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে,
নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে--
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে,
ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি ॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে--
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে,
ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি ॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার
পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে--
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল
তোমার চাষি ॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে--
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার
মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে--
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা,
তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি ॥
.
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী
ও আমার দেশের মাটি
ও আমার দেশের মাটি,
তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের
আঁচল পাতা ॥
তুমি মিশেছ মোর দেহের সনে,
তুমি মিলেছ মোর প্রাণে মনে,
তোমার ওই শ্যামলবরন কোমল মূর্তি মর্মে গাঁথা ॥
ওগো মা, তোমার কোলে জনম আমার,
মরণ তোমার বুকে।
তোমার 'পরে খেলা আমার দুঃখে সুখে।
তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে,
তুমি শীতল জলে জুড়াইলে,
তুমি যে সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা ॥
ও মা, অনেক তোমার খেয়েছি গো,
অনেক নিয়েছি মা--
তবু জানি নে-যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা!
আমার জনম গেল বৃথা কাজে,
আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে--
তুমি বৃথা আমায় শক্তি দিলে শক্তিদাতা ॥
09 December, 2015
এ ভাঙা সুখের মাঝে নয়ন-জলে
এ ভাঙা সুখের মাঝে নয়ন-জলে,
এ মলিন মালা কে লইবে।
ম্লান আলো ম্লান আশা হৃদয়-তলে,
এ চির বিষাদ কে বহিবে।
সুখনিশি অবসান, গেছে হাসি গেছে গান,
এখন এ ভাঙা প্রাণ লইয়া গলে
নীরব নিরাশা কে সহিবে।
ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি, ভালোবাসি--
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি॥
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় ভাসি॥
সেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে।
সেই সুরে বাজে মনে অকারণে
ভুলে-যাওয়া গানের বাণী,
ভোলা দিনের কাঁদন-হাসি॥
06 December, 2015
সখা তুমি আছ কোথা
সখা,তুমি আছ কোথা—
সারা বরষের পরে জানাতে এসেছি ব্যথা।।
কত মোহ,কত পাপ, কত শোক, কত তাপ,
কত যে সয়েছি আমি তোমারে কব সে কথা।।
যে শুভ্র জীবন তুমি মোরে দিয়েছিলে সখা,
দেখো আজি তাহে কত পড়েছে কলঙ্করেখা।।
এনেছি তোমারি কাছে, দাও তাহা দাও মুছে—
নয়নে ঝরিছে বারি, সভয়ে এদেছি পিতা।।
দেখো দেব,চেয়ে দেখো হৃদয়েতে নাহি বল—
সংসারের বায়ুবেগে করিতেছে টলমল।
লহো সে হৃদয় তুলে, রাখো তব পদমূলে—
সারাটি বরষ যেন নির্ভয়ে রহে গো সেথা।।
04 December, 2015
দুঃখ দিয়ে মেটাব দুঃখ তোমার
দুঃখ দিয়ে মেটাব দুঃখ তোমার।
স্নান করাব অতল জলে
বিপুল বেদনার।
মোর সংসার দিব যে জ্বালি,
শোধন হবে এ মোহের কালি--
মরণব্যথা দিব তোমার
চরণে উপহার॥
03 December, 2015
তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ খুলে গো
তারে দেখাতে পারি নে কেন প্রাণ। (খুলে গো)
কেন বুঝাতে পারি নে হৃদয়-বেদনা।
কেমনে সে হেসে চলে যায়, কোন্ প্রাণে ফিরেও না চায়,
এত সাধ এত প্রেম করে অপমান।
এত ব্যথাভরা ভালোবাসা, কেহ দেখে না,
প্রাণে গোপনে রহিল।
এ প্রেম কুসুম যদি হত, প্রাণ হতে ছিঁড়ে লইতাম,
তার চরণে করিতাম দান,
বুঝি সে তুলে নিত না, শুকাত অনাদরে,
তবু তার সংশয় হত অবসান।
.
রাগ: দেশ
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১২৯০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী