25 January, 2016

এসো আমার ঘরে।

এসো আমার ঘরে।
বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে॥
স্বপনদুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে
মুগ্ধ এ চোখে।
ক্ষণকালের আভাস হতে চিরকালের তরে
এসে আমার ঘরে॥
দুঃখসুখের দোলে এসো,
প্রাণের হিল্লোলে এসো।
ছিলে আশার অরূপ বাণী ফাগুনবাতাসে
বনের আকুল নিশ্বাসে--
এবার ফুলের প্রফুল্ল রূপ এসো বুকের 'পরে॥

22 January, 2016

Tumi Ektu Kebol boshte Deyo Kache - তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে,

তুমি একটু কেবল বসতে দিয়ো কাছে
আমায় শুধু ক্ষণেক তরে।
আজি হাতে আমার যা কিছু কাজ আছে
আমি সাঙ্গ করব পরে।
না চাহিলে তোমার মুখপানে
হৃদয় আমার বিরাম নাহি জানে,
কাজের মাঝে ঘুরে বেড়াই যত
ফিরি কূলহারা সাগরে॥
বসন্ত আজ উচ্ছ্বাসে নিশ্বাসে
এল আমার বাতায়নে।
অলস ভ্রমর গুঞ্জরিয়া আসে
ফেরে কুঞ্জের প্রাঙ্গণে।
আজকে শুধু একান্তে আসীন
চোখে চোখে চেয়ে থাকার দিন,
আজকে জীবন-সমর্পণের গান
গাব নীরব অবসরে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ চৈত্র, ১৩১৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1912
রচনাস্থান: শিলাইদহ
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়,
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভীমরাও শাস্ত্রী

21 January, 2016

Amar Rat Pohalo Sharod Prate - আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে

আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।
বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।
তোমার বুকে বাজল ধ্বনি
বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে--
ফাল্গুনে শ্রাবণে, কত প্রভাতে রাতে॥
যে কথা রয় প্রাণের ভিতর অগোচরে
গানে গানে নিয়েছিলে চুরি করে।
সময় যে তার হল গত
নিশিশেষের তারার মতো--
শেষ করে দাও শিউলিফুলের মরণ-সাথে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1332
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1925
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার

ও ভাই, দেখে যা, কত ফুল তুলেছি

ও ভাই, দেখে যা,
কত ফুল তুলেছি!
তুই আয় রে কাছে আয়,
আমি তোরে সাজিয়ে দি!
তোর হাতে মৃণাল-বালা,
তোর কানে চাঁপার দুল।
তোর মাথায় বেলের সিঁথি,
তোর খোঁপায় বকুল ফুল!
ও দেখবি রে ভাই, আয় রে ছুটে,
মোদের বকুল গাছে
রাশি রাশি হাসির মত
ফুল কত ফুটেছে।
কত গাছের তলায় ছড়াছড়ি
গড়াগড়ি যায়_
ও ভাই, সাবধানেতে আয় রে হেথা,
দিস নে দ'লে পায়!

20 January, 2016

Bodhu Kon Alo Laglo Chokhe - বঁধু, কোন্ আলো লাগল চোখে

বঁধু, কোন্ আলো লাগল চোখে!
বুঝি দীপ্তিরূপে ছিলে সূর্যলোকে!
ছিল মন তোমারি প্রতীক্ষা করি
যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি,
ছিল মর্মবেদনাঘন অন্ধকারে,
জন্ম-জনম গেল বিরহশোকে।
অস্ফুটমঞ্জরী কুঞ্জবনে,
সংগীতশূন্য বিষণ্ন মনে
সঙ্গীরিক্ত চিরদুঃখরাতি
পোহাব কি নির্জনে শয়ন পাতি!
সুন্দর হে, সুন্দর হে,
বরমাল্যখানি তব আনো বহে,
অবগুণ্ঠনছায়া ঘুচায়ে দিয়ে
হেরো লজ্জিত স্মিতমুখ শুভ আলোকে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ আশ্বিন, ১৩৪১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ

18 January, 2016

KrishnaKoli Ami Tarei Boli - কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো
মেঘের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে, 
মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল
শ্যামল দুটি গাই,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে
বারেক মেঘের গুরুগুরু।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
পূবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ।
আমার পানে দেখলে কি না চেয়ে
আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
এমনি করে কালো কাজল মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে হঠাৎ খুশি
ঘনিয়ে আসে চিতে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে কালো
মেয়ের কালো হরিণ-চোখ।
মাথার 'পরে দেয় নি তুলে বাস,
লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ॥
-
রাগ: কীর্তন
তাল: অর্ধঝাঁপ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৪ আষাঢ়, ১৩০৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৮ জুন, ১৯০০
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

15 January, 2016

Aguner Poroshmoni Chhoao Prane - আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে ॥
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো--
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে ॥
আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফোটাক তারা নব নব।
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো,
যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো--
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে ঊর্ধ্ব পানে ॥
রাগ: গৌড়সারং
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১১ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৮ অগাস্ট, ১৯১৪
রচনাস্থান: সুরুল
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

13 January, 2016

Mayabono Biharini Horini - মায়াবনবিহারিণী হরিণী

মায়াবনবিহারিণী হরিণী
গহনস্বপনসঞ্চারিণী,
কেন তারে ধরিবারে করি পণ
অকারণ।
থাক্ থাক্, নিজ-মনে দূরেতে,
আমি শুধু বাঁশরির সুরেতে
পরশ করিব ওর প্রাণমন
অকারণ॥
চমকিবে ফাগুনের পবনে,
পশিবে আকাশবাণী শ্রবণে,
চিত্ত আকুল হবে অনুখন
অকারণ।
দূর হতে আমি তারে সাধিব,
গোপনে বিরহডোরে বাঁধিব--
বাঁধনবিহীন সেই যে বাঁধন
অকারণ॥
-
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১২ আশ্বিন, ১৩৪১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুশীলকুমার ভঞ্জচৌধুরী

12 January, 2016

Mane Ki Dwidha Rekhe Gele Cole - মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে

মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে
সে দিন ভরা সাঁঝে,
যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে
মুখখানি--
কী কথা ছিল যে মনে॥
তুমি সে কি হেসে গেলে আঁখিকোণে--
আমি বসে বসে ভাবি নিয়ে কম্পিত
হৃদয়খানি,
তুমি আছ দূর ভুবনে॥
আকাশে উড়িছে বকপাঁতি,
বেদনা আমার তারি সাথি।
বারেক তোমায় শুধাবারে চাই
বিদায়কালে কী বল নাই,
সে কি রয়ে গেল গো সিক্ত যূথীর গন্ধবেদনে॥
-
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: ২ + ২ ছন্দ
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1344
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1937
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

Tomar Khola Hawa – তোমার খোলা হাওয়া

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে
টুকরো ক’রে কাছি
ডুবতে রাজি আছি
আমি ডুবতে রাজি আছি।
সকাল আমার গেল মিছে,
বিকেল যে যায় তারি পিছে;
রেখো না আর, বেঁধো না আর
কূলের কাছাকাছি।
মাঝির লাগি আছি জাগি
সকল রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে
করে কেবল খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে,
ডরব না তার ভ্রূকুটিতে;
দাও ছেড়ে দাও ওগো, আমি
তুফান পেলে বাঁচি।

শান্তিনিকেতন, ১৭ ভাদ্র-বিকাল, ১৩২১

Bodhu Miche Rag Koro Na - বঁধু মিছে রাগ কোরো না কোরো না

বঁধু, মিছে রাগ কোরো না, কোরো না।
মম মন বুঝে দেখো মনে মনে--
মনে রেখো, কোরো করুণা॥
পাছে আপনারে রাখিতে না পারি
তাই কাছে কাছে থাকি আপনারি--
মুখে হেসে যাই, মনে কেঁদে চাই--
সে আমার নহে ছলনা॥
দিনেকের দেখা, তিলেকের সুখ,
ক্ষণেকের তরে শুধু হাসিমুখ--
পলকের পরে থাকে বুক ভ'রে
চিরজনমের বেদনা।
তারি মাঝে কেন এত সাধাসাধি,
অবুধ আঁধারে কেন মরি কাঁদি--
দূর হতে এসে ফিরে যাই শেষে বহিয়া
বিফল বাসনা॥
.
রাগ: মিশ্র ঝিঁঝিট
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১০ আশ্বিন, ১৩০৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897
রচনাস্থান: পতিসর

11 January, 2016

Jokhon Porbe Na Mor Payer Chinho Ei Bate - যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
যখন জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়, আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা
বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন
কাটে, আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন
উঠবে ভরি--
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে,
বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে॥
.
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

09 January, 2016

বিশ্ব সদা তোমার কাছে ইশারা করে কত

বিশ্ব সদা তোমার কাছে ইশারা করে কত,
তুমিও তারে ইশারা দাও আপন মনোমত।
বিধির সাথে কেমন ছলে
নীরবে তব আলাপ চলে,
সৃষ্টি বুঝি এমনিতরো ইশারা অবিরত।

08 January, 2016

Darhiye Achho Tumi Amar Ganer Opare - দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে--
আমার  সুরগুলি পায় চরণ,
আমি পাই নে তোমারে ॥
বাতাস বহে মরি মরি,
আর বেঁধে রেখো না তরী--
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ॥
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ॥
.
রাগ: ইমন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Amra bedhechi kasher - আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ

আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ,
আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা--
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে
এনেছি ডালা ॥
এসো গো শারদলক্ষ্ণী,
তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো নির্মল নীলপথে,
এসো ধৌত শ্যামল আলো-ঝলমল-বনগিরিপর্বতে--
এসো মুকুটে পরিয়া শ্বেতশতদল
শীতল-শিশির-ঢালা ॥
ঝরা মালতীর ফুলে
আসন বিছানো নিভৃত কুঞ্জে ভরা
গঙ্গার কূলে
ফিরিছে মরাল ডানা পাতিবারে
তোমার চরণমূলে।
গুঞ্জরতান তুলিয়ো তোমার সোনার
বীণার তারে মৃদুমধু ঝঙ্কারে,
হাসি-ঢালা সুর গলিয়া পড়িবে
ক্ষণিক অশ্রুধারে।
রহিয়া রহিয়া যে পরশমণি ঝলকে অলককোণে
পলকের তরে সকরুণ করে বুলায়ো বুলায়ো মনে--
সোনা হয়ে যাবে সকল ভাবনা,
আঁধার হইবে আলা ॥
.
রাগ: ভৈরবী-কালাংড়া
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ ভাদ্র, ১৩১৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1908
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

07 January, 2016

তোমার নয়ন আমায় বারে বারে বলেছে

তোমার নয়ন আমায় বারে বারে
বলেছে গান গাহিবারে॥
ফুলে ফুলে তারায় তারায়
বলেছে সে কোন্ ইশারায়
দিবস-রাতির মাঝ-কিনারায়
ধূসর আলোয় অন্ধকারে।
গাই নে কেন কী কব তা,
কেন আমার আকুলতা—
ব্যথার মাঝে লুকায় কথা,
সুর যে হারাই অকূল পারে॥
যেতে যেতে গভীর স্রোতে
ডাক দিয়েছ তরী হতে।
ডাক দিয়েছ ঝড়-তুফানে
বোবা মেঘের বজ্রগানে,
ডাক দিয়েছ মরণপানে
শ্রাবণরাতের উতল ধারে।
যাই নে কেন জান না কি—
তোমার পানে মেলে আঁখি
কূলের ঘাটে বসে থাকি,
পথ কোথা পাই পারাবারে॥

তোমার নয়ন আমায় বারে বারে

তোমার নয়ন আমায় বারে বারে
বলেছে গান গাহিবারে॥
ফুলে ফুলে তারায় তারায়
বলেছে সে কোন্ ইশারায়
দিবস-রাতির মাঝ-কিনারায়
ধূসর আলোয় অন্ধকারে।
গাই নে কেন কী কব তা,
কেন আমার আকুলতা—
ব্যথার মাঝে লুকায় কথা,
সুর যে হারাই অকূল পারে॥
যেতে যেতে গভীর স্রোতে
ডাক দিয়েছ তরী হতে।
ডাক দিয়েছ ঝড়-তুফানে
বোবা মেঘের বজ্রগানে,
ডাক দিয়েছ মরণপানে
শ্রাবণরাতের উতল ধারে।
যাই নে কেন জান না কি—
তোমার পানে মেলে আঁখি
কূলের ঘাটে বসে থাকি,
পথ কোথা পাই পারাবারে॥

04 January, 2016

যার লাগি ফিরি একা একা

যার লাগি ফিরি একা একা,
আঁখি পিপাসিত নাহি দেখা,
তারি বাঁশি ওগো তারি বাঁশি
তারি বাঁশি বাজে হিয়া ভরি।
বাণী নাহি তবু কানে কানে
কী যে শুনি তাহা কেবা জানে।
এই হিয়া-ভরা বেদনাতে
বারি-ছলছল আঁখিপাতে
ছায়া দোলে তারি ছায়া দোলে
ছায়া দোলে দিবানিশি ধরি॥

DinGuli Mor Sonar Khanchay - দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না

দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
কান্নাহাসির বাঁধন তারা সইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
আমার প্রাণের গানের ভাষা
শিখবে তারা ছিল আশা--
উড়ে গেল, সকল কথা কইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
স্বপন দেখি, যেন তারা কার আশে
ফেরে আমার ভাঙা খাঁচার চার পাশে--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।
এত বেদন হয় কি ফাঁকি।
ওরা কি সব ছায়ার পাখি।
আকাশ-পারে কিছুই কি গো বইল না--
সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি॥
-
রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1325
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918

03 January, 2016

Chitto Jetha Bhayshunyo - চিত্ত যেথা ভয়শূন্য (প্রার্থনা)

"""প্রার্থনা"""
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গনতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়,
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি—
পৌরুষেরে করে নি শতধা, নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা,
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত॥

02 January, 2016

Aj Josna Rate Sobai Gache Bone - আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে

আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥
যাব না গো যাব না যে,
রইনু পড়ে ঘরের মাঝে--
এই নিরালায় রব আপন কোণে।
যাব না এই মাতাল সমীরণে ॥
আমার এ ঘর বহু যতন ক'রে
ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে।
আমারে যে জাগতে হবে,
কী জানি সে আসবে কবে
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে ॥
.
রাগ: বেহাগ
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২২ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর