26 August, 2017

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান --

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান--
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই তার মূল্যের পরিমাণ॥
রজনীগন্ধা অগোচরে
যেমন রজনী স্বপনে ভরে সৌরভে,
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই, মরমে আমার ঢেলেছ
তোমার গান॥
বিদায় নেবার সময় এবার হল--
প্রসন্ন মুখ তোলো, মুখ তোলো,
মুখ তোলো--
মধুর মরণে পূর্ণ করিয়া সঁপিয়া যাব
প্রাণ চরণে।
যারে জান নাই, যারে জান নাই,
যারে জান নাই,
তার গোপন ব্যথার নীরব রাত্রি হোক
আজি অবসান॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1345
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939

25 August, 2017

প্রভাত হইল নিশি কানন ঘুরে

প্রভাত হইল নিশি কানন ঘুরে,
বিরহ-বিধুর হিয়া মরিল ঝুরে।
ম্লান শশী অস্ত গেল ম্লান হাসি মিলাইল
কাঁদি উঠিল প্রাণ কাতর সুরে।
চল্ সখী চল্ তবে ঘরেতে ফিরে
যাক ভেসে ম্লান আঁখি নয়ন-নীরে।
যাক ফেটে শূন্য প্রাণ, হোক্ আশা অবসান,
হৃদয় যাহারে ডাকে থাক্ সে দূরে।
-
রাগ: বিভাস-কালাংড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

24 August, 2017

আমি রূপে তোমায় ভোলাব না

আমি রূপে তোমায় ভোলাব না,
ভালোবাসায় ভোলাব।
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো,
গান দিয়ে দ্বার খোলাব॥
ভরাব না ভূষণভারে,
সাজাব না ফুলের হারে–
প্রেমকে আমার মালা করে গলায়
তোমার দোলাব॥
জানবে না কেউ কোন্ তুফানে তরঙ্গদল
নাচবে প্রাণে,
চাঁদের মতো অলখ টানে
জোয়ারে ঢেউ তোলাব॥
-
রাগ: কীর্তন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা
দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
যখন    জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়,   আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা
বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন
কাটে,    আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন
উঠবে ভরি--
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে,
বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ

আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
অসীম কালের যে হিল্লোলে জোয়ার-ভাঁটার ভুবন দোলে
নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে,
ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে,
ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।
কান পেতেছি, চোখ মেলেছি,
ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
-
রাগ: মিশ্র কেদারা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩৩১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1924

23 August, 2017

পুরানো সেই দিনের কথা - রবীন্দ্র সঙ্গীত

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা,
সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা,
প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব,
প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি,
দুলেছি দোলায়--
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি,
গেলেম কে কোথায়--
আবার  দেখা যদি হল, সখা,
প্রাণের মাঝে আয়॥
-
রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে --

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে--
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,
সুন্দর করো হে ॥
জাগ্রত করো, উদ্যত করো,
নির্ভয় করো হে।
মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে ॥
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,
মুক্ত করো হে বন্ধ।
সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ।
চরণপদ্মে মম চিত নিষ্পন্দিত করো হে।
নন্দিত করো, নন্দিত করো,
নন্দিত করো হে ॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩১৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1907
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন

ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ।

ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ।
আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ॥
তুমি নও তো সূর্য, নও তো চন্দ্র,
তোমার তাই ব'লে কি কম আনন্দ।
তুমি আপন জীবন পূর্ণ ক'রে
আপন আলো জ্বেলেছ॥
তোমার যা আছে তা তোমার আছে,
তুমি নও গো ঋণী কারো কাছে,
তোমার অন্তরে যে শক্তি আছে
তারি আদেশ পেলেছ।
তুমি আঁধার-বাঁধন ছাড়িয়ে ওঠ,
তুমি ছোটো হয়ে নও গো ছোটো,
জগতে যেথায় যত আলো
সবায় আপন ক'রে ফেলেছ॥
-
রাগ: ছায়ানট
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার

22 August, 2017

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক'
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
আমার পরশ ক'রে প্রাণ সুধায় ভ'রে
তুমি যাও যে সরে--
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯২৩
রচনাস্থান: আমেদাবাদ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Amar Praner Pore Chole Galo Ke - আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে

আমার প্রাণের 'পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো।
সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে--
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত।
সে চলে গেল, বলে গেল না--
সে কোথায় গেল ফিরে এল না।
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল কী যেন গেয়ে গেল--
তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে।
সে ঢেউয়ের মতন ভেসে গেছে,
চাঁদের আলোর দেশে গেছে,
যেখান দিয়ে হেসে গেছে,  হাসি তার রেখে গেছে রে--
মনে হল আঁখির কোণে আমায় যেন ডেকে গেছে সে।
আমি কোথায় যাব, কোথায় যাব,
ভাবতেছি তাইএকলা বসে।
সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ঘোর।
সে প্রাণের কোথায় দুলিয়ে গেল ফুলের ডোর।
কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল,
ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলেগেল।
হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এলে রে--
কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে॥
-
রাগ: পিলু-কালাংড়া-পরজ-কীর্তন
তাল: আড়খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

20 August, 2017

পূর্বগগনভাগে দীপ্ত হইল সুপ্রভাত

পূর্বগগনভাগে
দীপ্ত হইল সুপ্রভাত
তরুণারুণরাগে।
শুভ্র শুভ মুহূর্ত আজি সার্থক কর’ রে,
অমৃতে ভর’ রে—
অমিতপুণ্যভাগী কে
জাগে কে জাগে॥