23 December, 2017

আমি যখন ছিলেম অন্ধ

আমি যখন ছিলেম অন্ধ,
সুখের খেলায় বেলা গেছে পাই নি তো আনন্দ।
খেলা ঘরের দেয়াল গেঁথে
খেয়াল নিয়ে ছিলেম মেতে,
ভিত ভেঙে যেই আসলে ঘরে
ঘুচল আমার বন্ধ,
সুখের খেলা আর রোচে না
পেয়েছি আনন্দ॥
ভীষণ আমার, রুদ্র আমার,
নিদ্রা গেল ক্ষুদ্র আমার,
উগ্র ব্যথায় নূতন ক'রে
বাঁধলে আমার ছন্দ।
যেদিন তুমি অগ্নিবেশে
সব-কিছু মোর নিলে এসে,
সেদিন আমি পূর্ণ হলেম ঘুচল আমার দ্বন্দ্ব,
দুঃখ সুখের পারে তোমায় পেয়েছি আনন্দ॥ 
-
রাগ: কীর্তন
তাল: তেওরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩৩৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1932
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার 

07 November, 2017

বড়ো বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে

বড়ো বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে।
কোথা হতে এলে তুমি হৃদিমাঝারে॥
ওই মুখ ওই হাসি কেন এত ভালোবাসি,
কেন গো নীরবে ভাসি অশ্রুধারে॥
তোমারে হেরিয়া যেন জাগে স্মরণে
তুমি চিরপুরাতন চিরজীবনে।
তুমি না দাঁড়ালে আসি হৃদয়ে বাজে না বাঁশি—
যত আলো যত হাসি ডুবে আঁধারে॥

21 September, 2017

আমি আশায় আশায় থাকি

আমি আশায় আশায় থাকি।
আমার তৃষিত-আকুল আঁখি॥
ঘুমে-জাগরণে-মেশা প্রাণে স্বপনের নেশা--
দূর দিগন্তে চেয়ে কাহারে ডাকি॥
বনে বনে করে কানাকানি অশ্রুত বাণী,
কী গাহে পাখি।
কী কব না পাই ভাষা, মোর জীবন রঙিন
কুয়াশা ফেলেছে ঢাকি।
-
রাগ: কাফি-কানাড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

20 September, 2017

মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি

মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি
কোন্ নব চঞ্চল ছন্দে।
মম অন্তর কম্পিত আজি নিখিলের হৃদয়স্পন্দে॥
আসে কোন্ তরুণ অশান্ত, উড়ে বসনাঞ্চলপ্রান্ত,
আলোকের নৃত্যে বনান্ত মুখরিত অধীর আনন্দে।
অম্বরপ্রাঙ্গনমাঝে নিঃস্বর মঞ্জীর গুঞ্জে।
অশ্রুত সেই তালে বাজে  করতালি পল্লবপুঞ্জে।
কার পদপরশন-আশা  তৃণে তৃণে অর্পিল ভাষা,
সমীরণ বন্ধনহারা  উন্মন কোন্ বনগন্ধে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): বৈশাখ, ১৩২৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার সকল দুখের প্রদীপ

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
দিবস গেলে করব নিবেদন--
আমার   ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায়
আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--
আমার   ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা,
বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে
একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--
আমার   ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
-
রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

19 September, 2017

দিবস রজনী, আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি

দিবস রজনী, আমি যেন কার
আশায় আশায় থাকি।
(তাই) চমকিত মন, চকিত শ্রবণ,
তৃষিত আকুল আঁখি।
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই,
সদা মনে হয় যদি দেখা পাই,
"কে আসিছে" বলে চমকিয়ে চাই
কাননে ডাকিলে পাখি।
জাগরণে তারে না দেখিতে পাই,
থাকি স্বপনের আশে,
ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়,
বাঁধিব স্বপনপাশে।
এত ভালোবাসি, এত যারে চাই,
মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই,
যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে,
তাহারে আনিবে ডাকি।
-
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

12 September, 2017

তোমায় গান শোনাব

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক'
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
আমার পরশ ক'রে প্রাণ সুধায় ভ'রে
তুমি যাও যে সরে--
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯২৩
রচনাস্থান: আমেদাবাদ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভালোবেসে দুখ সে ও সুখ

ভালোবেসে দুখ সে-ও সুখ, সুখ নাহি আপনাতে।
না না না, সখা, ভুলি নে ছলনাতে।
মন দাও দাও দাও সখী দাও পরের হাতে।
না না না, মোরা ভুলি নে ছলনাতে।
সুখের শিশির নিমেষে শুকায়, সুখ চেয়ে দুখ ভালো,
আনো, সজল বিমল প্রেম ছল ছল নলিন নয়ন-পাতে।
না না না, মোরা ভুলি নে ছলনাতে।
রবির কিরণে ফুটিয়া নলিনী আপনি টুটিয়া যায়,
সুখ পায় তায় সে।
চির-কলিকা-জনম, কে করে বহন চির-শিশির রাতে।
না না না, মোরা ভুলি নে ছলনাতে।
-
রাগ: পিলু-ভীমপলশ্রী-কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

আকাশে আজ কোন্ চরণের আসা যাওয়া

আকাশে আজ কোন্ চরণের আসা-যাওয়া
বাতাসে আজ কোন্ পরশের লাগে হাওয়া ॥
অনেক দিনের বিদায়বেলায় ব্যাকুল বাণী
আজ উদাসীর বাঁশির সুরে কে দেয় আনি--
বনের ছায়ায় তরুণ চোখের করুণ চাওয়া ॥
কোন্ ফাগুনে যে ফুল ফোটা হল সারা
মৌমাছিদের পাখায় পাখায় কাঁদে তারা।
বকুলতলায় কাজ-ভোলা সেই কোন্ দুপুরে
যে-সব কথা ভাসিয়ে দিলেম গানের সুরে
ব্যথায় ভ'রে ফিরে আসে সে গান-গাওয়া

11 September, 2017

আমার পরান যাহা চায়

আমার পরান যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর, কেহ নাই কিছু নাই গো।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও, সুখের সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,
আর কিছু নাহি চাই গো।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,
দীর্ঘ বরষ মাস।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে, তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো।
-
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

06 September, 2017

ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে ওরে পাখি

ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে ওরে পাখি,
যা উড়ে,যা উড়ে,যা রে একাকী।
বাজবে তোর পায়ে সেই বন্ধ,
পাখাতে পাবি আনন্দ—
দিশাহারা মেঘ যে গেল ডাকি।
নির্মল দুঃখে যে সেই তো মুক্তি
নির্মল শূন্যের প্রেমে।
আত্মবিড়ম্বন দারুন লজ্জা,
নিঃশেষে যাক সে থেমে।
দুরাশার মরাবাঁচায় এতদিন ছিলি
তোর খাঁচায়—
ধূলিতলে যাবি রাখি॥
-
রাগ: কাফি
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1345
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

04 September, 2017

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে--
আমার  সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে ॥
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী--
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ॥
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ॥
-
রাগ: ইমন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী,
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

03 September, 2017

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে
কী উৎসবের লগনে॥
সব আলোটি কেমন ক'রে
ফেল আমার মুখের 'পরে,
তুমি আপনি থাকো আলোর পিছনে ॥
প্রেমটি যেদিন জ্বালি হৃদয়-গগনে
কী উৎসবের লগনে
সব আলো তার কেমন ক'রে
পড়ে তোমার মুখের 'পরে,
আমি আপনি পড়ি আলোর পিছনে ॥
-
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।
এসো গন্ধে বরনে, এসো গানে।
এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে,
এসো চিত্তে অমৃতময় হরষে,
এসো মুগ্ধ মুদিত দু নয়ানে॥
এসো নির্মল উজ্জ্বল কান্ত,
এসো সুন্দর স্নিগ্ধ প্রশান্ত,
এসো এসো হে বিচিত্র বিধানে।
এসো দু:খে সুখে, এসো মর্মে,
এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে;
এসো সকল-কর্ম-অবসানে॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৬ ভাদ্র, ১৩০১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
রচনাস্থান: পতিসর

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
চেনাশোনার কোন্ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥
ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।
যাবে না, যাবে না--
দেয়াল যত সব গেল টুটে॥
বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্ বলরামের আমি চেলা,
আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--
যত মাতাল জুটে।
যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,
যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।
পাব না, পাব না,
মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

খোলো খোলো দ্বার

খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না আর
বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে।
দাও সাড়া দাও,      এই দিকে চাও
এসো দুই বাহু বাড়ায়ে॥
কাজ হয়ে গেছে সারা, উঠেছে সন্ধ্যাতারা,
আলোকের খেয়া    হয়ে গেল দেয়া
অস্তসাগর পারায়ে॥
ভরি লয়ে ঝারি      এনেছি তো বারি
সেজেছি তো শুচি দুকূলে,
বেঁধেছি তো চুল,   তুলেছি তো ফুল
গেঁথেছি তো মালা মুকুলে।
ধেনু এল গোঠে ফিরে,  পাখিরা এসেছে নীড়ে,
পথ ছিল যত    জুড়িয়া জগত
আঁধারে গিয়েছে হারায়ে॥
-
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

02 September, 2017

আমার হিয়ার মাঝে

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি,
আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায় সকল
আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে,
তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম,
কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার
দুঃখসুখের গানে সুর দিয়েছ তুমি,
আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী,
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজি এ প্রভাতে রবির কর - নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ

আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের 'পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে
প্রভাত-পাখির গান।
না জানি কেন রে এতদিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ
রুধিয়া রাখিতে নারি।
থর থর করি কাঁপিছে ভূধর,
শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে,
ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল
গরজি উঠিছে দারুণ রোষে।
হেথায় হোথায় পাগলের প্রায়
ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায়,
বাহিরিতে চায়, দেখিতে না পায়
কোথায় কারার দ্বার।
-
- প্রভাতসংগীত - (নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ)
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি
তুমি জাগাও তারে ওই নয়নের আলোক হানি ॥
সে যে দিনের বেলায় করবে খেলা হাওয়ায় দুলে,
রাতের অন্ধকারে নেবে তারে বক্ষে তুলে--
ওগো তখনি তো গন্ধে তাহার ফুটবে বাণী ॥
আমার বীণাখানি পড়ছে আজি সবার চোখে,
হেরো তারগুলি তার দেখছে গুনে সকল লোকে।
ওগো কখন সে যে সভা ত্যেজে আড়াল হবে,
শুধু সুরটুকু তার উঠবে বেজে করুণ রবে--
যখন তুমি তারে বুকের 'পরে লবে টানি ॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

01 September, 2017

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন --

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
দিবস গেলে করব নিবেদন--
আমার   ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায়
আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--
আমার   ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা,
বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে
একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
-
রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

26 August, 2017

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান --

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান--
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই তার মূল্যের পরিমাণ॥
রজনীগন্ধা অগোচরে
যেমন রজনী স্বপনে ভরে সৌরভে,
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই, মরমে আমার ঢেলেছ
তোমার গান॥
বিদায় নেবার সময় এবার হল--
প্রসন্ন মুখ তোলো, মুখ তোলো,
মুখ তোলো--
মধুর মরণে পূর্ণ করিয়া সঁপিয়া যাব
প্রাণ চরণে।
যারে জান নাই, যারে জান নাই,
যারে জান নাই,
তার গোপন ব্যথার নীরব রাত্রি হোক
আজি অবসান॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1345
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939

25 August, 2017

প্রভাত হইল নিশি কানন ঘুরে

প্রভাত হইল নিশি কানন ঘুরে,
বিরহ-বিধুর হিয়া মরিল ঝুরে।
ম্লান শশী অস্ত গেল ম্লান হাসি মিলাইল
কাঁদি উঠিল প্রাণ কাতর সুরে।
চল্ সখী চল্ তবে ঘরেতে ফিরে
যাক ভেসে ম্লান আঁখি নয়ন-নীরে।
যাক ফেটে শূন্য প্রাণ, হোক্ আশা অবসান,
হৃদয় যাহারে ডাকে থাক্ সে দূরে।
-
রাগ: বিভাস-কালাংড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

24 August, 2017

আমি রূপে তোমায় ভোলাব না

আমি রূপে তোমায় ভোলাব না,
ভালোবাসায় ভোলাব।
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো,
গান দিয়ে দ্বার খোলাব॥
ভরাব না ভূষণভারে,
সাজাব না ফুলের হারে–
প্রেমকে আমার মালা করে গলায়
তোমার দোলাব॥
জানবে না কেউ কোন্ তুফানে তরঙ্গদল
নাচবে প্রাণে,
চাঁদের মতো অলখ টানে
জোয়ারে ঢেউ তোলাব॥
-
রাগ: কীর্তন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা
দেনা,
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
যখন    জমবে ধুলা তানপুরাটার তারগুলায়,
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়,   আহা,
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা
বনবাসের,
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দিঘির ধারগুলায়--
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে,
কাটবে দিন কাটবে,
কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন
কাটে,    আহা,
ঘাটে ঘাটে খেয়ার তরী এমনি সে দিন
উঠবে ভরি--
চরবে গোরু খেলবে রাখাল ওই মাঠে।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে।
তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।
সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি-- আহা,
নতুন নামে ডাকবে মোরে,
বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে,
আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায়
ডাকলে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ এপ্রিল, ১৯১৬
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ

আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
অসীম কালের যে হিল্লোলে জোয়ার-ভাঁটার ভুবন দোলে
নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে,
ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে,
ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।
কান পেতেছি, চোখ মেলেছি,
ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥
-
রাগ: মিশ্র কেদারা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩৩১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1924

23 August, 2017

পুরানো সেই দিনের কথা - রবীন্দ্র সঙ্গীত

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা,
সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা,
প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব,
প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি,
দুলেছি দোলায়--
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি,
গেলেম কে কোথায়--
আবার  দেখা যদি হল, সখা,
প্রাণের মাঝে আয়॥
-
রাগ: মিশ্র ভূপালী-বিলাতি ভাঙা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে --

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে--
নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,
সুন্দর করো হে ॥
জাগ্রত করো, উদ্যত করো,
নির্ভয় করো হে।
মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে ॥
যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,
মুক্ত করো হে বন্ধ।
সঞ্চার করো সকল কর্মে শান্ত তোমার ছন্দ।
চরণপদ্মে মম চিত নিষ্পন্দিত করো হে।
নন্দিত করো, নন্দিত করো,
নন্দিত করো হে ॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩১৪
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1907
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন

ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ।

ও জোনাকী, কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ।
আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ॥
তুমি নও তো সূর্য, নও তো চন্দ্র,
তোমার তাই ব'লে কি কম আনন্দ।
তুমি আপন জীবন পূর্ণ ক'রে
আপন আলো জ্বেলেছ॥
তোমার যা আছে তা তোমার আছে,
তুমি নও গো ঋণী কারো কাছে,
তোমার অন্তরে যে শক্তি আছে
তারি আদেশ পেলেছ।
তুমি আঁধার-বাঁধন ছাড়িয়ে ওঠ,
তুমি ছোটো হয়ে নও গো ছোটো,
জগতে যেথায় যত আলো
সবায় আপন ক'রে ফেলেছ॥
-
রাগ: ছায়ানট
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1312
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1905
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার

22 August, 2017

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক'
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
আমার পরশ ক'রে প্রাণ সুধায় ভ'রে
তুমি যাও যে সরে--
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯২৩
রচনাস্থান: আমেদাবাদ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Amar Praner Pore Chole Galo Ke - আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে

আমার প্রাণের 'পরে চলে গেল কে
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো।
সে যে ছুঁয়ে গেল, নুয়ে গেল রে--
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত।
সে চলে গেল, বলে গেল না--
সে কোথায় গেল ফিরে এল না।
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল কী যেন গেয়ে গেল--
তাই আপন-মনে বসে আছি কুসুমবনেতে।
সে ঢেউয়ের মতন ভেসে গেছে,
চাঁদের আলোর দেশে গেছে,
যেখান দিয়ে হেসে গেছে,  হাসি তার রেখে গেছে রে--
মনে হল আঁখির কোণে আমায় যেন ডেকে গেছে সে।
আমি কোথায় যাব, কোথায় যাব,
ভাবতেছি তাইএকলা বসে।
সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ঘোর।
সে প্রাণের কোথায় দুলিয়ে গেল ফুলের ডোর।
কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল,
ফুলের গন্ধ পাগল হয়ে সঙ্গে তারি চলেগেল।
হৃদয় আমার আকুল হল, নয়ন আমার মুদে এলে রে--
কোথা দিয়ে কোথায় গেল সে॥
-
রাগ: পিলু-কালাংড়া-পরজ-কীর্তন
তাল: আড়খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

20 August, 2017

পূর্বগগনভাগে দীপ্ত হইল সুপ্রভাত

পূর্বগগনভাগে
দীপ্ত হইল সুপ্রভাত
তরুণারুণরাগে।
শুভ্র শুভ মুহূর্ত আজি সার্থক কর’ রে,
অমৃতে ভর’ রে—
অমিতপুণ্যভাগী কে
জাগে কে জাগে॥

20 June, 2017

মায়া - বৃথা এ বিড়ম্বনা কিসের লাগিয়া এতই তিয়াষ,

মায়া
- মানসী
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
বৃথা এ বিড়ম্বনা!
কিসের লাগিয়া এতই তিয়াষ,
কেন এত যন্ত্রণা!
ছায়ার মতন ভেসে চলে যায়
দরশন পরশন—
এই যদি পাই এই ভুলে যাই,
তৃপ্তি না মানে মন।
কত বার আসে, কত বার ভাসে,
মিশে যায় কত বার—
পেলেও যেমন না পেলে তেমন
শুধু থাকে হাহাকার।
সন্ধ্যাপবনে কুঞ্জভবনে
নির্জন নদীতীরে
ছায়ার মতন হৃদয়বেদন
ছায়ার লাগিয়া ফিরে।
কত দেখাশোনা কত আনাগোনা
চারি দিকে অবিরত,
শুধু তারি মাঝে একটি কে আছে
তারি তরে ব্যথা কত!
চিরদিন ধ’রে এমনি চলিছে,
যুগ-যুগ গেছে চ’লে!
মানবের মেলা করে গেছে খেলা
এই ধরণীর কোলে!
এই ছায়া লাগি কত নিশি জাগি
কাঁদায়েছে কাঁদিয়াছে—
মহাসুখ মানি প্রিয়তনুখানি
বাহুপাশে বাঁধিয়াছে!
নিশিদিন কত ভেবেছে সতত
নিয়ে কার হাসিকথা!
কোথা তারা আজ, সুখ দুখ লাজ,
কোথা তাহাদের ব্যথা?
কোথা সেদিনের অতুলরূপসী
হৃদরপ্রেয়সীচয়?
নিখিলের প্রাণে ছিল যে জাগিয়া,
আজ সে স্বপনও নয়!
ছিল সে নয়নে অধরের কোণে
জীবন মরণ কত—
বিকচ সরস তনুর পরশ
কোমল প্রেমের মতো।
এত সুখ দুখ তীব্র কামনা
জাগরণ হাহুতাশ
যে রূপজ্যোতিরে সদা ছিল ঘিরে
কোথা তার ইতিহাস?
যমুনার ঢেউ সন্ধ্যারঙিন
মেঘখানি ভালোবাসে—
এও চলে যায়, সেও চলে যায়,
অদৃষ্ট বসে হাসে।