29 March, 2016

তুমি কি কেবলই ছবি - রবীন্দ্র সঙ্গীত

তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।
ওই-যে সুদূর নীহারিকা
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,
ওই যারা দিনরাত্রি
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।
হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি॥
নয়নসমুখে তুমি নাই,
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই-- আজি তাই
শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
নাহি জানি, কেহ নাহি জানে--
তব সুর বাজে মোর গানে,
কবির অন্তরে তুমি কবি--
নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥
-
রাগ: কানাড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ কার্তিক, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২১ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: এলাহাবাদ

25 March, 2016

পরিণাম - জানি হে, যবে প্রভাত হবে, তোমার কৃপা-তরণী

>> পরিণাম <<
- কল্পনা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
ভৈরবী । ঝাঁপতাল

জানি হে, যবে প্রভাত হবে, তোমার কৃপা-তরণী
লইবে মোরে ভব-সাগর-কিনারে।
করি না ভয়, তোমারি জয় গাহিয়া যাব চলিয়া,
দাঁড়াব আমি তব অমৃত-দুয়ারে।
জানি হে, তুমি যুগে যুগে তোমার বাহু ঘেরিয়া
রেখেছ মোরে তব অসীম ভুবনে--
জনম মোরে দিয়েছ তুমি আলোক হতে আলোকে,
জীবন হতে নিয়েছ নবজীবনে।
জানি হে নাথ, পুণ্যপাপে হৃদয় মোর সতত
শয়ান আছে তব নয়ান-সমুখে--
আমার হাতে তোমার হাত রয়েছে দিন-রজনী
সকল পথে-বিপথে সুখে-অসুখে।
জানি হে জানি, জীবন মম বিফল কভু হবে না,
দিবে না ফেলি বিনাশভয়পাথারে--
এমন দিন আসিবে যবে করুণাভরে আপনি
ফুলের মতো তুলিয়া লবে তাহারে।
-
১৩০৬

24 March, 2016

উন্নতিলক্ষণ - ওগো পুরবাসী, আমি পরবাসী জগৎব্যাপারে অজ্ঞ,

>> উন্নতিলক্ষণ <<
- কল্পনা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
ওগো পুরবাসী, আমি পরবাসী
জগৎব্যাপারে অজ্ঞ,
শুধাই তোমায় এ পুরশালায়
আজি এ কিসের যজ্ঞ?
সিংহদুয়ারে পথের দু ধারে
রথের না দেখি অন্ত--
কার সম্মানে ভিড়েছে এখানে
যত উষ্ণীষবন্ত?
বসেছেন ধীর অতি গম্ভীর
দেশের প্রবীণ বিজ্ঞ,
প্রবেশিয়া ঘরে সংকোচে ডরে
মরি আমি অনভিজ্ঞ।
কোন্ শূরবীর জন্মভূমির
ঘুচালো হীনতাপঙ্ক?
ভারতের শুচি যশশশীরুচি
কে করিল অকলঙ্ক?
রাজা মহারাজ মিলেছেন আজ
কাহারে করিতে ধন্য?
বসেছেন এঁরা পূজ্যজনেরা
কাহার পূজার জন্য?
উত্তর
গেল সে সাহেব ভরি দুই জেব
করিয়া উদর পূর্তি,
এরা বড়োলোক করিবেন শোক
স্থাপিয়া তাহারি মূর্তি॥
অভাগা কে ওই মাগে নাম সই,
দ্বারে দ্বারে ফিরে খিন্ন,
তবু উৎসাহে রচিবারে চাহে
কাহার স্মরণচিহ্ন?
সন্ধ্যাবেলায় ফিরে আসে হায়
নয়ন অশ্রুসিক্ত,
হৃদয় ক্ষুণ্ন খাতাটি শূন্য,
থলি একেবারে রিক্ত!
যাহার লাগিয়া ফিরিছে মাগিয়া
মুছি ললাটের ঘর্ম,
স্বদেশের কাছে কী সে করিয়াছে?
কী অপরাধের কর্ম?
উত্তর
আর কিছু নহে, পিতাপিতামহে
বসায়ে গেছে সে উচ্চে,
জন্মভূমিরে সাজায়েছে ঘিরে
অমরপুষ্পগুচ্ছে॥
-
১৩০৬

23 March, 2016

ওরে গৃহবাসী খোল্, দ্বার খোল্, লাগল যে দোল।

ওরে গৃহবাসী খোল্, দ্বার খোল্, লাগল যে দোল।
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে,
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে,
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
বেণুবন মর্মরে দখিন বাতাসে,
প্রজাপতি দোলে ঘাসে ঘাসে।
মউমাছি ফিরে যাচি ফুলের দখিনা,
পাখায় বাজায় তার ভিখারির বীণা,
মাধবীবিতানে বায়ু গন্ধে বিভোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
-
রাগ: বিভাস-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1337
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1931
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার

06 March, 2016

আমি কেবলি স্বপন করেছি বপন বাতাসে--

আমি কেবলি স্বপন করেছি বপন বাতাসে--
তাই আকাশকুসুম করিনু চয়ন হতাশে।
ছায়ার মতন মিলায় ধরণী,
কূল নাহি পায় আশার তরণী,
মানসপ্রতিমা ভাসিয়া বেড়ায় আকাশে।
কিছু বাঁধা পড়িল না শুধু এ বাসনা-বাঁধনে।
কেহ নাহি দিল ধরা শুধু এ সুদূর সাধনে।
আপনার মনে বসিয়া একেলা
অনলশিখায় কী করিনু খেলা,
দিনশেষে দেখি ছাই হল সব হুতাশে!
আমি কেবলি স্বপন করেছি বপন বাতাসে।
-
বলেশ্বরী, ৮ আশ্বিন, ১৩০৪

05 March, 2016

দিনান্তবেলায় শেষের ফসল নিলেম তরী-পরে,

দিনান্তবেলায় শেষের ফসল নিলেম তরী-'পরে,
এ পারে কৃষি হল সারা,
যাব ও পারের ঘাটে॥
হংসবলাকা উড়ে যায়
দূরের তীরে, তারার আলোয়,
তারি ডানার ধ্বনি বাজে মোর অন্তরে॥
ভাঁটার নদী ধায় সাগর-পানে কলতানে,
ভাবনা মোর ভেসে যায় তারি টানে।
যা-কিছু নিয়ে চলি শেষ সঞ্চয়
সুখ নয় সে, দঃখ সে নয়, নয় সে কামনা--
শুনি শুধু মাঝির গান আর দাঁড়ের
ধ্বনি তাহার স্বরে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩০ ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৪ মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

04 March, 2016

আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি, তুমি অবসরমত বাসিয়ো।

আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি,
তুমি অবসরমত বাসিয়ো।
নিশিদিন হেথায় বসে আছি,
তোমার যখন মনে পড়ে আসিয়ো ॥
আমি সারানিশি তোমা-লাগিয়া
রব বিরহশয়নে জাগিয়া--
তুমি নিমেষের তরে প্রভাতে
এসে মুখপানে চেয়ে হাসিয়ো ॥
তুমি চিরদিন মধুপবনে
চির-বিকশিত বনভবনে
যেয়ো মনোমত পথ ধরিয়া
তুমি নিজ সুখস্রোতে ভাসিয়ো।
যদি তার মাঝে পড়ি আসিয়া
তবে আমিও চলিব ভাসিয়া,
যদি দূরে পড়ি তাহে ক্ষতি কী--
মোর স্মৃতি মন হতে নাশিয়ো ॥
-
রাগ: মিশ্র গৌরী
তাল: কাহারবা-দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1296
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1889

আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে--

আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে--
তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥
সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,
সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ--
তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম
রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে॥
তোমার অরূপ মূর্তিখানি
ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি।
বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে
সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী
গানের তানের সে উন্মাদনে॥
-
রাগ: বাহার-সোহিনী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১৩৪৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): মার্চ, ১৯৩৯
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

এত ফুল কে ফোটালে কাননে --

এত ফুল কে ফোটালে কাননে !
লতাপাতায় এত হাসি -
তরঙ্গ মরি কে ওঠালে।।
সজনীর বিয়ে হবে ফুলেরা শুনেছে সবে—
সে কথা কে রটালে।।
-
রাগ: মিশ্র কালাংড়া
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ফাল্গুন, ১২৯০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে!
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ্-কথার–
পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা মনে মনে।।
সূর্য যখন অস্তে পড়ে ঢুলি মেঘে মেঘে
আকাশ-কুসুম তুলি।
সাত সাগরের ফেনায় ফেনায় মিশে
আমি যাই ভেসে দূর দিশে–
পরীর দেশের বন্ধ দুয়ার দিই হানা মনে মনে।।
-
রাগ: কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শান্তিদেব ঘোষ,
শৈলজারঞ্জন মজুমদার

02 March, 2016

ছুটির বাঁশি বাজল যে ওই নীল গগনে,

ছুটির বাঁশি বাজল যে ওই নীল গগনে,
আমি কেন একলা বসে এই বিজনে॥
বাঁধন টুটে উঠবে ফুটে শিউলিগুলি,
তাই তো কুঁড়ি কানন জুড়ি উঠছে দুলি,
শিশির-ধোওয়া হাওয়ার ছোঁওয়া লাগল বনে—
সুর খুঁজে তাই শূন্যে তাকাই আপন-মনে॥
বনের পথে কী মায়াজাল হয় যে বোনা,
সেইখানেতে আলোছায়ার চেনাশোনা।
ঝরে-পড়া মালতী তার গন্ধশ্বাসে
কান্না-আভাস দেয় মেলে ওই ঘাসে ঘাসে,
আকাশ হাসে শুভ্র কাশের আন্দোলনে—
সুর খুঁজে তাই শূন্যে তাকাই আপন-মনে॥

01 March, 2016

দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি---

দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি—
বরষ ফুরায়ে যাবে, ভুলে যাবে জানি॥
তবু তো ফাল্গুনরাতে  এ গানের বেদনাতে
আঁখি তব ছলোছলো, এই বহু মানি॥
চাহি না রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা,
তখনি চলিয়া যাব শেষ হলে খেলা।
   আসিবে ফাল্গুন পুন,   তখন আবার শুনো
     নব পথিকেরই গানে নূতনের বাণী॥

আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসি।

আমি চঞ্চল হে,
আমি সুদূরের পিয়াসি।
দিন চলে যায়, আমি আনমনে তারি
আশা চেয়ে থাকি বাতায়নে--
ওগো, প্রাণে মনে আমি যে তাহার পরশ
পাবার প্রয়াসী॥
ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর,
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি--
মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই
সে কথা যে যাই পাশরি॥
আমি উন্মনা হে,
হে সুদূর, আমি উদাসী॥
রৌদ্র-মাখানো অলস বেলায় তরুমর্মরে
ছায়ার খেলায়
কী মুরতি তব নীল আকাশে নয়নে উঠে
গো আভাসি।
হে সুদূর, আমি উদাসী।
ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর,
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি--
কক্ষে আমার রুদ্ধ দুয়ার সে কথা
যে যাই পাশরি॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1309
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1902
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর