09 December, 2016

ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন

ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন,
তবে কেন মিছে ভালোবাসা।
মন দিয়ে মন পেতে চাহি।
ওগো কেন,
ওগো কেন মিছে এ দুরাশা।
হৃদয়ে জ্বালায়ে বাসনার শিখা,
নয়নে সাজায়ে মায়া-মরীচিকা,
শুধু ঘুরে মরি মরুভূমে।
ওগো কেন,
ওগো কেন মিছে এ পিপাসা।
আপনি যে আছে আপনার কাছে,
নিখিল জগতে কী অভাব আছে।
আছে মন্দ সমীরণ, পুষ্পবিভূষণ,
কোকিল-কূজিত কুঞ্জ।
বিশ্বচরাচর লুপ্ত হয়ে যায়,
এ কী ঘোর প্রেম অন্ধ রাহুপ্রায়
জীবন যৌবন গ্রাসে।
তবে কেন,
তবে কেন মিছে এ কুয়াশা।
-
রাগ: কাফি
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা দেবী

আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী

আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী।
আমি    সকল দাগে হব দাগি॥
তোমার পথের কাঁটা করব চয়ন,   
যেথা তোমার ধুলার শয়ন
সেথা আঁচল পাতব আমার--
তোমার রাগে অনুরাগী॥
আমি    শুচি-আসন টেনে টেনে বেড়াব না বিধান মেনে,
যে পঙ্কে ওই চরণ পড়ে তাহারি ছাপ বক্ষে মাগি॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সাহানা দেবী

আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী

আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী।
আমি    সকল দাগে হব দাগি॥
তোমার পথের কাঁটা করব চয়ন,   
যেথা তোমার ধুলার শয়ন
সেথা আঁচল পাতব আমার--
তোমার রাগে অনুরাগী॥
আমি    শুচি-আসন টেনে টেনে বেড়াব না বিধান মেনে,
যে পঙ্কে ওই চরণ পড়ে তাহারি ছাপ বক্ষে মাগি॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: সাহানা দেবী

07 December, 2016

বাতাসের চলার পথে - (নবীন)

বাতাসের চলার পথে
যে মুকুল পড়ে ঝরে ,
তা নিয়ে তোমার লাগি রেখেছি
ডালি ভরে ।
-
- নবীন (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

25 October, 2016

আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে

আমার হৃদয় তোমার আপন হাতের দোলে দোলাও,
কে আমারে কী-যে বলে ভোলাও ভোলাও ॥
ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে,
বাঁশির ডাকে সকল বাঁধন খোলাও ॥
মনে পড়ে, কত-না দিন রাতি
আমি ছিলেম তোমার খেলার সাথী।
আজকে তুমি তেমনি ক'রে সামনে তোমার রাখো ধরে,
আমার প্রাণে খেলার সে ঢেউ তোলাও ॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1328
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1921
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

09 September, 2016

আমারে তুমি অশেষ করেছ

আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব–
ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ জীবন নব নব।।
কত-যে গিরি কত-যে নদী -তীরে
বেড়ালে বহি ছোটো এ বাঁশিটিরে,
কত-যে তান বাজালে ফিরে ফিরে
কাহারে তাহা কব।।
তোমারি ওই অমৃতপরশে     আমার হিয়াখানি
হারালো সীমা বিপুল হরষে, উথলি উঠে বাণী।
আমার শুধু একটি মুঠি ভরি
দিতেছ দান দিবস-বিভাবরী–
হল না সারা, কত-না যুগ ধরি
কেবলই আমি লব।।
-
রাগ: ছায়ানট
তাল: ঝম্পক
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৭ বৈশাখ, ১৩১৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1912
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভীমরাও শাস্ত্রী

17 August, 2016

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি
তুমি          জাগাও তারে ওই নয়নের আলোক হানি ॥
সে যে দিনের বেলায় করবে খেলা হাওয়ায় দুলে,
রাতের অন্ধকারে নেবে তারে বক্ষে তুলে--
ওগো          তখনি তো গন্ধে তাহার ফুটবে বাণী ॥
আমার        বীণাখানি পড়ছে আজি সবার চোখে,
হেরো তারগুলি তার দেখছে গুনে সকল লোকে।
ওগো          কখন সে যে সভা ত্যেজে আড়াল হবে,
শুধু সুরটুকু তার উঠবে বেজে করুণ রবে--
যখন          তুমি তারে বুকের 'পরে লবে টানি ॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

07 July, 2016

তোমায় গান শোনাব - Tomai Gaan Shonabo

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া
বুকে    চমক দিয়ে তাই তো ডাক'
ওগো    দুখজাগানিয়া ॥
এল    আঁধার ঘিরে,    পাখি    এল নীড়ে,
তরী এল তীরে
শুধু    আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো    দুখজাগানিয়া ॥
আমার    কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
আমার    পরশ ক'রে    প্রাণ    সুধায় ভ'রে
তুমি    যাও যে সরে--
বুঝি    আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো    দুখজাগানিয়া ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯২৩
রচনাস্থান: আমেদাবাদ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

06 July, 2016

তুমি একলা ঘরে বসে বসে কী সুর বাজালে

তুমি একলা ঘরে বসে বসে কী সুর বাজালে
প্রভু, আমার জীবনে!
তোমার পরশরতন গেঁথে গেঁথে আমায় সাজালে
প্রভু, গভীর গোপনে ॥
দিনের আলোর আড়াল টানি কোথায় ছিলে নাহি
জানি,
অস্তরবির তোরণ হতে চরণ বাড়ালে
আমার রাতের স্বপনে ॥
আমার হিয়ায় হিয়ায় বাজে আকুল আঁধার যামিনী,
সে যে তোমার বাঁশরি।
আমি শুনি তোমার আকাশপারের তারার রাগিণী,
আমার সকল পাশরি।
কানে আসে আশার বাণী-- খোলা পাব দুয়ারখানি
রাতের শেষে শিশির-ধোওয়া প্রথম সকালে
তোমার করুণ কিরণে ॥

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে
টুকরো ক'রে কাছি
ডুবতে রাজি আছি
আমি    ডুবতে রাজি আছি।
সকাল আমার গেল মিছে,
বিকেল যে যায় তারি পিছে গো ---
রেখো না আর, বেঁধো না আর
কূলের কাছাকাছি।
মাঝির লাগি আছি জাগি
সকল রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে
করে কেবল খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে,
ডরব না তার ভ্রূকুটিতে;
দাও ছেড়ে দাও ওগো, আমি
তুফান পেলে বাঁচি।
.
রাগ: সারিগান
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ ভাদ্র, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুধীরচন্দ্র কর

04 July, 2016

আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে

আজি হৃদয় আমার যায় যে ভেসে
যার পায় নি দেখা তার উদ্দেশে॥
বাঁধন ভোলে, হাওয়ায় দোলে,
যায় সে বাদল-মেঘের কোলে রে
কোন্-সে অসম্ভবের দেশে॥
সেথায় বিজন সাগরকূলে
শ্রাবণ ঘনায় শৈলমূলে।
রাজার পুরে তমালগাছে নূপুর শুনে ময়ূর নাচে   রে
সুদূর তেপান্তরের শেষে॥
-
রাগ: ইমন-পূরবী
তাল: দাদরা-খেমটা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন জেগে ওঠে

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
চেনাশোনার কোন্ বাইরে যেখানে পথ নাই
নাই রে
              সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥
ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।
যাবে না, যাবে না--
দেয়াল যত সব গেল টুটে॥
বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্ বলরামের আমি
চেলা,
          আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--
যত মাতাল জুটে।
যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,
যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।
পাব না, পাব না,
মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

সখী ভাবনা কাহারে বলে

সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী,
যাতনা কাহারে বলে ।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী 
‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
        সখী, ভালোবাসা কারে কয়!  সে কি
কেবলই যাতনাময় ।
সে কি   কেবলই চোখের জল?
সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে
এমন দুখের আশ ।
আমার চোখে তো সকলই শোভন,
সকলই নবীন, সকলই বিমল, সুনীল আকাশ,
শ্যামল কানন,
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল— 
সকলই আমার মতো।
        তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়,
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়—
না জানে বেদন, না জানে রোদন, না জানে
সাধের যাতনা যত ।
ফুল সে হাসিতে হাসিতে ঝরে, জোছনা
হাসিয়া মিলায়ে যায়,
হাসিতে হাসিতে আলোকসাগরে আকাশের
তারা তেয়াগে কায় ।
আমার মতন সুখী কে আছে।   আয় সখী,
আয় আমার কাছে—
        সুখী হৃদয়ের সুখের গান   শুনিয়া তোদের
জুড়াবে প্রাণ ।
প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল    একদিন নয়
হাসিবি তোরা—
        একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া
গাহিব মোরা।।
-
রাগ: বেহাগ-খাম্বাজ-বাউল
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1287
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1881
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

03 July, 2016

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে--
আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।
এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি
পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি
নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।
রহিয়া রহিয়া বিপুল মাঠের 'পরে
নব তৃণদলে বাদলের ছায়া পড়ে।
এসেছে এসেছে এই কথা বলে প্রাণ,
এসেছে এসেছে উঠিতেছে এই গান,
নয়নে এসেছে, হৃদয়ে এসেছে ধেয়ে।
আবার আষাঢ় এসেছে আকাশ ছেয়ে।
-
রাগ: মল্লার
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১০ আষাঢ়, ১৩১৭
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
রচনাস্থান: বোলপুর
স্বরলিপিকার: ভীমরাও শাস্ত্রী

29 June, 2016

স্বপ্ন আমার জোনাকি দীপ্ত প্রাণের মণিকা

স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা॥
-
My fancies are fireflies
speaks of living light--
twinkling in the dark.
-
২৬ কার্ত্তিক, ১৩৩৩ Nov.7.1926 বুডাপেস্ট্
Balatonfűred, Hungary

21 June, 2016

গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি

গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি
তখন তারে চিনি আমি, তখন তারে জানি।
তখন তারি আলোর ভাষায় আকাশ ভরে
ভালোবাসায়,
তখন তারি ধুলায় ধুলায় জাগে পরম বাণী ॥
তখন সে যে বাহির ছেড়ে অন্তরে মোর আসে,
তখন আমার হৃদয় কাঁপে তারি ঘাসে ঘাসে।
রূপের রেখা রসের ধারায় আপন সীমা কোথায় হারায়,
তখন দেখি আমার সাথে সবার কানাকানি ॥

গানের সুরের আসনখানি পাতি পথের ধারে

গানের সুরের আসনখানি পাতি পথের ধারে।
ওগো পথিক তুমি এসে বসবে বারে বারে।।

ঐ যে তোমার ভোরের পাখি নিত্য করে ডাকাডাকি,
অরুণ-আলোর খেয়ায় যখন এস ঘাটের পারে,
মোর প্রভাতীর গানখানিতে দাঁড়াও আমার দ্বারে।।

আজ সকালে মেঘের ছায়া লুটিয়ে পড়ে বনে,
জল ভরেছে ঐ গগনের নীল নয়নের কোণে।

আজকে এলে নতুন বেশে তালের বনের মাঠের শেষে,
অমনি চলে যেয়ো নাকো গোপনসঞ্চারে।
দাঁড়িয়ো আমার মেঘলা গানের বাদল-অন্ধকারে।।

20 June, 2016

মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি

মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি
কোন্ নব চঞ্চল ছন্দে।
মম অন্তর কম্পিত আজি নিখিলের হৃদয়স্পন্দে॥
আসে কোন্ তরুণ অশান্ত, উড়ে
বসনাঞ্চলপ্রান্ত,
আলোকের নৃত্যে বনান্ত মুখরিত অধীর
আনন্দে।
অম্বরপ্রাঙ্গনমাঝে নিঃস্বর মঞ্জীর গুঞ্জে।
অশ্রুত সেই তালে বাজে করতালি
পল্লবপুঞ্জে।
কার পদপরশন-আশা তৃণে তৃণে অর্পিল ভাষা,
সমীরণ বন্ধনহারা উন্মন কোন্ বনগন্ধে॥

রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): বৈশাখ, ১৩২৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

18 June, 2016

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে--
আমার  সুরগুলি পায় চরণ,  আমি পাই নে তোমারে ॥
বাতাস বহে মরি মরি,  আর বেঁধে রেখো না
তরী--
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ॥
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি
আসি
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ॥
-
রাগ: ইমন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

06 June, 2016

এ দিন আজি কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার

এ দিন আজি কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার?
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার?।
কাহার অভিষেকের তরে  সোনার ঘটে আলোক ভরে,
ঊষা কাহার আশিস বহি হল আঁধার পার?।
বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা—
কার হৃদয়ের মাঝে হল তাদের মালা গাঁথা?
বহু যুগের উপহারে   বরণ করি নিল কারে,
কার জীবনে প্রভাত আজি ঘুচায় অন্ধকার।

এ দিন আজি কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার

এ দিন আজি কোন্ ঘরে গো খুলে দিল দ্বার?
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার?।
কাহার অভিষেকের তরে  সোনার ঘটে আলোক ভরে,
ঊষা কাহার আশিস বহি হল আঁধার পার?।
বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা—
কার হৃদয়ের মাঝে হল তাদের মালা গাঁথা?
বহু যুগের উপহারে   বরণ করি নিল কারে,
কার জীবনে প্রভাত আজি ঘুচায় অন্ধকার।

11 May, 2016

শেষের কবিতা

শেষের কবিতা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
চক্রে-
পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।
                 ওগো বন্ধু,
             সেই ধাবমান কাল
      জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেরি তার জাল--
             তুলে নিল দ্রুতরথে
      দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
         তোমা হতে বহু দূরে।
             মনে হয়, অজস্র মৃত্যুরে
         পার হয়ে আসিলাম
      আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়--
         রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
             আমার পুরানো নাম।
         ফিরিবার পথ নাহি;
             দূর হতে যদি দেখ চাহি
                 পারিবে না চিনিতে আমায়।
                         হে বন্ধু, বিদায়।
      কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে
             বসন্তবাতাসে
      অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
             ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,
      সেই ক্ষণে খুঁজে দেখো--
কিছু মোর পিছে রহিল সে
             তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতিপ্রদোষে
                 হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
      হয়তো ধরিবে কভু নাম-হারা স্বপ্নের মুরতি।
                 তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
      সব-চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়,
                 সে আমার প্রেম।
         তারে আমি রাখিয়া এলেম
      অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে।
         পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
             কালের যাত্রায়।
                 হে বন্ধু, বিদায়।
                  তোমার হয় নি কোনো ক্ষতি
   মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি
           যদি সৃষ্টি করে থাক, তাহারি আরতি
             হোক তব সন্ধ্যাবেলা,
                 পূজার সে খেলা
      ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে;
             তৃষার্ত আবেগ-বেগে
      ভ্রষ্ট নাহি হবে তার কোনো ফুল নৈবেদ্যের থালে।
             তোমার মানস-ভোজে সযত্নে সাজালে
      যে ভাবরসের পাত্র বাণীর তৃষায়,
             তার সাথে দিব না মিশায়ে
      যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।
             আজো তুমি নিজে
             হয়তো-বা করিবে রচন
      মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নাবিষ্ট তোমার বচন।
      ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
             হে বন্ধু, বিদায়।
             মোর লাগি করিয়ো না শোক,
      আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
             মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই--
      শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।
      উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
             সেই ধন্য করিবে আমাকে।
             শুক্লপক্ষ হতে আনি
             রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
                      যে পারে সাজাতে
             অর্ঘ্যথালা  কৃষ্ণপক্ষ রাতে,
             যে আমারে দেখিবারে পায়
                 অসীম ক্ষমায়
             ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি,
      এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
                 তোমারে যা দিয়েছিনু তার
                 পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
                 হেথা মোর তিলে তিলে দান,
      করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
             হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।
                 ওগো তুমি নিরুপম,
                       হে ঐশ্বর্যবান,
             তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান--
                 গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
                       হে বন্ধু, বিদায়।
                                         

08 May, 2016

হে নূতন, দেখা দিক আর- বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ

আজ ২৫শে বৈশাখ
কবিগুরুর জন্মদিন তাকে জানাই
আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ।।
-
হে নূতন,
দেখা দিক আর-
বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ ।।
               তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদঘাটন
                              সূর্যের মতন ।
               রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন ।
                        ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,
               ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময় ।
               উদয়দিগন্তে শঙ্খ বাজে,  মোর চিত্তমাঝে
                       চিরনূতনেরে দিল ডাক
                             পঁচিশে বৈশাখ ।।

25 April, 2016

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে - Tomar Khola Howa Lagye Pale

তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে
টুকরো করে কাছি,
ডুবতে রাজি আছি, আমি ডুবতে রাজি আছি॥
সকাল আমার গেল মিছে, বিকেল যে যায়
তারি পিছে গো,
রেখো না আর, বেঁধো না আর কুলের
কাছাকাছি॥
মাঝির লাগি আছি জাগি সকল
রাত্রিবেলা,
ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল
খেলা।
ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার
ভ্রুকুটিতে
দাও ছেরে দাও, ওগো, আমি তুফান পেলে
বাঁচি॥

07 April, 2016

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি তুমি

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি
তুমি জাগাও তারে ওই নয়নের আলোক হানি ॥
সে যে দিনের বেলায় করবে খেলা হাওয়ায় দুলে,
রাতের অন্ধকারে নেবে তারে বক্ষে তুলে--
ওগো তখনি তো গন্ধে তাহার ফুটবে বাণী ॥
আমার বীণাখানি পড়ছে আজি সবার চোখে,
হেরো তারগুলি তার দেখছে গুনে সকল লোকে।
ওগো কখন সে যে সভা ত্যেজে আড়াল হবে,
শুধু সুরটুকু তার উঠবে বেজে করুণ রবে--
যখন তুমি তারে বুকের 'পরে লবে টানি ॥

29 March, 2016

তুমি কি কেবলই ছবি - রবীন্দ্র সঙ্গীত

তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।
ওই-যে সুদূর নীহারিকা
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,
ওই যারা দিনরাত্রি
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,
তুমি কি তাদের মতো সত্য নও।
হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি॥
নয়নসমুখে তুমি নাই,
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই-- আজি তাই
শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
নাহি জানি, কেহ নাহি জানে--
তব সুর বাজে মোর গানে,
কবির অন্তরে তুমি কবি--
নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি॥
-
রাগ: কানাড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ কার্তিক, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২১ অক্টোবর, ১৯১৪
রচনাস্থান: এলাহাবাদ

25 March, 2016

পরিণাম - জানি হে, যবে প্রভাত হবে, তোমার কৃপা-তরণী

>> পরিণাম <<
- কল্পনা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
ভৈরবী । ঝাঁপতাল

জানি হে, যবে প্রভাত হবে, তোমার কৃপা-তরণী
লইবে মোরে ভব-সাগর-কিনারে।
করি না ভয়, তোমারি জয় গাহিয়া যাব চলিয়া,
দাঁড়াব আমি তব অমৃত-দুয়ারে।
জানি হে, তুমি যুগে যুগে তোমার বাহু ঘেরিয়া
রেখেছ মোরে তব অসীম ভুবনে--
জনম মোরে দিয়েছ তুমি আলোক হতে আলোকে,
জীবন হতে নিয়েছ নবজীবনে।
জানি হে নাথ, পুণ্যপাপে হৃদয় মোর সতত
শয়ান আছে তব নয়ান-সমুখে--
আমার হাতে তোমার হাত রয়েছে দিন-রজনী
সকল পথে-বিপথে সুখে-অসুখে।
জানি হে জানি, জীবন মম বিফল কভু হবে না,
দিবে না ফেলি বিনাশভয়পাথারে--
এমন দিন আসিবে যবে করুণাভরে আপনি
ফুলের মতো তুলিয়া লবে তাহারে।
-
১৩০৬

24 March, 2016

উন্নতিলক্ষণ - ওগো পুরবাসী, আমি পরবাসী জগৎব্যাপারে অজ্ঞ,

>> উন্নতিলক্ষণ <<
- কল্পনা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
ওগো পুরবাসী, আমি পরবাসী
জগৎব্যাপারে অজ্ঞ,
শুধাই তোমায় এ পুরশালায়
আজি এ কিসের যজ্ঞ?
সিংহদুয়ারে পথের দু ধারে
রথের না দেখি অন্ত--
কার সম্মানে ভিড়েছে এখানে
যত উষ্ণীষবন্ত?
বসেছেন ধীর অতি গম্ভীর
দেশের প্রবীণ বিজ্ঞ,
প্রবেশিয়া ঘরে সংকোচে ডরে
মরি আমি অনভিজ্ঞ।
কোন্ শূরবীর জন্মভূমির
ঘুচালো হীনতাপঙ্ক?
ভারতের শুচি যশশশীরুচি
কে করিল অকলঙ্ক?
রাজা মহারাজ মিলেছেন আজ
কাহারে করিতে ধন্য?
বসেছেন এঁরা পূজ্যজনেরা
কাহার পূজার জন্য?
উত্তর
গেল সে সাহেব ভরি দুই জেব
করিয়া উদর পূর্তি,
এরা বড়োলোক করিবেন শোক
স্থাপিয়া তাহারি মূর্তি॥
অভাগা কে ওই মাগে নাম সই,
দ্বারে দ্বারে ফিরে খিন্ন,
তবু উৎসাহে রচিবারে চাহে
কাহার স্মরণচিহ্ন?
সন্ধ্যাবেলায় ফিরে আসে হায়
নয়ন অশ্রুসিক্ত,
হৃদয় ক্ষুণ্ন খাতাটি শূন্য,
থলি একেবারে রিক্ত!
যাহার লাগিয়া ফিরিছে মাগিয়া
মুছি ললাটের ঘর্ম,
স্বদেশের কাছে কী সে করিয়াছে?
কী অপরাধের কর্ম?
উত্তর
আর কিছু নহে, পিতাপিতামহে
বসায়ে গেছে সে উচ্চে,
জন্মভূমিরে সাজায়েছে ঘিরে
অমরপুষ্পগুচ্ছে॥
-
১৩০৬

23 March, 2016

ওরে গৃহবাসী খোল্, দ্বার খোল্, লাগল যে দোল।

ওরে গৃহবাসী খোল্, দ্বার খোল্, লাগল যে দোল।
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে,
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে,
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
বেণুবন মর্মরে দখিন বাতাসে,
প্রজাপতি দোলে ঘাসে ঘাসে।
মউমাছি ফিরে যাচি ফুলের দখিনা,
পাখায় বাজায় তার ভিখারির বীণা,
মাধবীবিতানে বায়ু গন্ধে বিভোল।
দ্বার খোল্, দ্বার খোল্॥
-
রাগ: বিভাস-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1337
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1931
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার